গত সপ্তাহে নিজেদের নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। আগামী চার বছরের জন্য ডেমোক্র্যাট জো বাইডেনকে দেশটির দায়িত্ব দিয়েছেন মার্কিনিরা। জো বাইডেন নির্বাচিত হওয়ায় খুশি দেশটির ক্রীড়ামহল। কারণ খেলাধুলা নিয়ে আগে থেকেই আগ্রহ আছে দেশটির নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের। এই বাইডেন ছিলেন একজন তুখোড় ক্রীড়াবিদ। স্কুল ফুটবলে ডেলাওয়্যার রাজ্যের এক দুর্দান্ত খেলোয়াড় ছিলেন তিনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডেলাওয়্যার ক্লেমন্টে অবস্থিত আর্কমিয়ার একাডেমিতে খেলেছেন তিনি।
আর্কমিয়ার একাডেমির সিনিয়র দলের প্রধান কোচ একবার বলেছিলেন, বাইডেনের বয়স যখন ১৬ বছর ছিল তখন সে দুর্দান্ত ফুটবল খেলত। সে পাসিংয়ের জন্য তখন বিখ্যাত ছিল। কনফারেন্স টুর্নামেন্টে মোট ২৪ পয়েন্ট নিয়ে প্রতিযোগিতার পঞ্চম সর্বোচ্চ স্কোরার হন তিনি। এছাড়া নন-কনফারেন্স ম্যাচগুলো হিসেব করলে ওই মৌসুমে বাইডেনের পয়েন্ট ছিল ৬০ এর অধিক, যা গোটা ডেলাওয়্যার অঙ্গরাজ্যেরই অন্যতম সর্বোচ্চ।
বাইডেন কিন্তু শুধু ফুটবলই না, আর্চমিয়ার বেসবল দলেরও একজন সদস্য ছিলেন। বাইডেন আউটফিল্ডে খেলতেন এবং ব্যাট করতেনও লাইনআপের শেষার্ধে।
নির্বাচনের আগে থেকেই ক্রীড়াপ্রেমী বাইডেনকে সমর্থন দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ক্রীড়াবিদরা। এনবিএ কোচ স্টিভ কের, সাবেক টেনিস তারকা বিলি জেন কিং, নারী ফুটবল তারকা মেগান রপিনো, এনবিএ তারকা ক্রিস পলদের মত ক্রীড়াবিদরা বাইডেনকে সমর্থন জানিয়েছেন।
বাইডেন নির্বাচিত হওয়ায় তাই আশাবাদী হয়ে উঠেছেন দেশের ক্রীড়াবিদরা। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের ক্রীড়াঙ্গনে তেমন কোন অবদান নেই ট্রাম্পের। উল্টো ট্রাম্পের উপর ক্ষোভ ছিল দেশটির নারী ফুটবলারদের। বিভিন্ন ইস্যুতেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সমালোচনা করেছেন দেশটির নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক রাপিনো। নিজেদের দাবী নিয়ে ট্রাম্পের ভৎসর্না শুনতে হয়েছিল তাদের। বর্ণবাদী আচরণ থেকে শুরু করে অধিবাসী নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গ, সমকামীদের আন্দোলন নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সমালোচনা করেছেন রাপিনো।
তবে রাপিনোদের ক্ষোভের জায়গাটি আরেক কারণে। জাতীয় দলের ফুটবলারদের বেতন–বোনাসের ক্ষেত্রে ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে যে বৈষম্য, এ নিয়ে বরাবরই সোচ্চার রাপিনো ও তার সতীর্থরা। কিন্তু ট্রাম্পের কাছে রাপিনোদের দাবি কখনোই খুব একটা গুরুত্ব পায়নি। ট্রাম্পের কাছে এরকম দাবী আদায়ে ব্যর্থ হওয়ার পর তাদের পাশে দাড়িয়েছিলেন বাইডেন। এমনকি রাপিনোদের লড়াই চালিয়ে যাওয়ার উৎসাহ দিতেন বাইডেন।
রাপিনোদের দাবী ছিল, পুরুষ দলের মতই সমান বেতন কাঠামোর। তখনকার সময়ে এরকম বৈষম্যের কারণে খেলা থেকে জাতীয় দলের অনেক ফুটবলারই সরে গেছেন। এর মধ্যেই দাবী আদায়ে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের নারী ফুটবলাররা। বকেয়া ভাতা আদায়ের জন্য ফেডারেশনের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন তারা। তাদের দাবি ছিল, পুরুষ দলকে যে ভিত্তিতে বোনাস দেওয়া হয়, সেটা নারী দলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয় না। নারীদের ফুটবলে চারটি বিশ্বকাপ জিতেছে যুক্তরাষ্ট্র। অলিম্পিকেও চারটি সোনা জিতেছে তারা। নারী দলের এত সাফল্য থাকা সত্বেও তেমন কোন উদ্যোগ নিতে দেখা যায় নি যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবল ফেডারেশনের।
তাই পুরুষদের তুলনা করে তাদের সমপরিমাণ দাবী করেছিলেন রাপিনোরা। ছেলেদের সাফল্যের সাথে বোনাস মিলিয়ে নারী দলের সাফল্য-বোনাস মিলিয়ে প্রায় ৬ কোটি ৬০ লাখ ডলারের বকেয়ার দাবি জানিয়ে মামলা করেছিলেন রাপিনোরা। যদিও সেই মামলায় জয় পায়নি তারা।
এই রায়ে হতাশ হয়ে পড়েছিলেন রাপিনো-মরগানরা। তখন রাপিনোদের সাহস দিয়েছেন বাইডেন। আদালতের রায়ের পর টুইটারে রাপিনোদের লড়াই চালিয়ে যেতে বলেছেন। সে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবল ফেডারেশনকে সতর্ক বার্তা পাঠিয়েছেন, আদালতের রায়ের জন্য অপেক্ষা না করে দ্রুত যেন এ বৈষম্য দূর করা হয়, ‘যুক্তরাষ্ট্রের নারী দলকে বলছি, হাল ছেড়ো না। এ লড়াই এখনো শেষ হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবল ফেডারেশনকে বলছি, সমান বেতনের ব্যবস্থা করো, এখনই! না হলে আমি যখন প্রেসিডেন্ট হব, তখন বিশ্বকাপের টাকা খুঁজতে অন্য কোথাও যেতে হবে তোমাদের।’